হোম আমাদের সম্পর্কে জেলা বিচার বিভাগের ইতিহাস
সিলেট বিচারবিভাগ এর ইতিহাস
সিলেট ৩৬০ আউলিয়ার পদ চিহ্নে ধন্য একটি প্রাচীন জনপদ। চীনা পরিব্রাজক হিউয়াং সাং ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে তার ভ্রমণ কাহিনীতে সিলেট জেলা সম্পর্কে লিখেছেন।মহারাজা শ্রী চন্দ্র কর্তৃক উৎকীর্ন তাম্রলিপি থেকে জানা যায় যে, দশম শতাব্দীতে তিনি সিলেট বিজয় করেছিলেন। চতুর্দশ শতাব্দীতে হযরত শাহ্ জালাল ইয়ামেনি (রাঃ) সিলেটে ইসলাম প্রচার শুরু করেন এবং ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেট বিজয় করেন।সিলেট জেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লর্ডস উইলিয়াম ম্যাগপেস থ্যাকারকে প্রথম কালেক্টর হিশেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট লিন্ডসে কালেক্টর হিশেবে যোগদান করেন। ইংরেজ আমলে কালেক্টর ছিলেন জেলার বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ সহ সকল বিভাগের একক অধিপতি। তার অধিনেই বিচার প্রশাসন পরিচালিত হত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাস্ট্র ক্ষমতা দখলের পর তারা জেলার বিচারকে দু’ভাগে ভাগ করেন, যথা- দেওয়ানী ও ফৌজদারি। যিনি দেওয়ানি মামলার বিচার করতেন তাকে বলা হত দেওয়ান এবং যিনি ফৌজদারি মামলার বিচার করতেন তাকে বলা হত ফৌজদার। কালের বিবর্তনে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল রেগুলেশন, ১৭৯৩ (১৭৯৩ সালের ৩ নং রেগুলেশন) মূলে সর্বপ্রথম দেওয়ানি আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। Bengal Civil Courts Act, 1871 অনুসারে জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, সাব-জজ ও মুন্সিফ এর পদ সৃজিত হয়। Bengal Sessions Courts Act, 1871 অনুসারে প্রত্যেক জেলার জন্য দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত সৃজিত হয়। পরবর্তীতে The Civil Courts Act,1887 এবং The Code of Criminal Procedure, 1898 প্রনয়নের মধ্য দিয়ে আদালত কাঠামো বর্তমান পর্যায়ে আসে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, সিলেট এর রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ১৮৬২ বা তৎপূর্ব থেকে এই আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ১৮৬২ সালে এখানে ১ টি জেলা ও দায়রা জজ আদালত , ১ টি সাব-জজ আদালত ও ১ টি মুন্সেফ কোর্ট ছিল। ১৯৩০ সালে এখানে ১ টি অতিরিক্ত মুন্সেফ কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে সিলেটে ১ টি জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং এর অধীনস্ত ৪ টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ৪ টি যুগ্ম জেলা জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ১ টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, এবং ৪টি সিনিয়র সহকারী জজ ও ৮ টি সহকারী জজ আদালত রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সিনিয়র সহকারী জজ অতিরিক্ত আদালত, সদর, বর্তমানে পারিবারিক আদালত হিশেবে কাজ করছে।
২০১৩ সালে সিলেটে মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। মহানগর দায়রা জজশীপে একটি মহানগর দায়রা জজ আদালত, একটি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এবং দু’টি যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত রয়েছে।
পাশাপাশি এখানে ১ টি বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত, ১ টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ১ টি জন নিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, ১ টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, ১ টি মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, ১ টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, ১ টি শ্রম আদালত ও ১ টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে।
১ লা নভেম্বর, ২০০৭ খ্রিঃ সালে নির্বাহী থেকে পৃথক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি সৃষ্টির পর থেকে সিলেটে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে সিলেট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে ১ টি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ১ টি অতিঃ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ১ টি বিদ্যুৎ আদালত এবং ৯ টি সিনিয়র জুডিসিয়াল ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে। তন্মধ্যে জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অবস্থান ঐ উপজেলায় যা ১৯৪৭ সালে জকিগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের সন্নিকটে একটি বাড়িতে রেসিডেন্সিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য আছে ১ টি চীফ মেট্রোপলিটন আদালত, ১ টি অতিঃ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৩ টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
বাংলাদেশের সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ.এফ.এম. আহসান উদ্দিন চৌধুরী ১২-০২-১৯৬৫ খ্রিঃ থেকে ০১/১১/১৯৬৫ খ্রিঃ পর্যন্ত সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন। এই আদালতের সাবেক মাননীয় জেলা ও দায়রা জজদের মধ্যে জনাব মোঃ ইফতেখার রছুল, জনাব এম. এ. কুদ্দুস, জনাব মোহাম্মদ মারজিউল হক, জনাব কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, জনাব এ.এন.এম. বশির উল্লাহ এবং সর্বশেষ জনাব মোঃ বজলুর রহমান বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
নবনীতা গুহ (সিনিয়র সহকারী জজ), মুহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন (সিনিয়র সহকারী জজ) , আসমা জাহান (জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) এবং রুবেল মিয়া (জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট)।